উত্তম চাকমা (মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি)
ধর্ম যার যার উৎসব সবার এই স্লোগান সামনে রেখে বছর ঘুরে আবারও পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম আদিবাসী জনসাধরনের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক ও জুম্ম জাতীয় উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু-২০২৩ শুরু হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ন্যায় মহালছড়ি উপজেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে আজ ১২ই এপ্রিল বুধবার হইতে ১৪ই-এপ্রিল শুক্রবার তিন দিন ব্যাপি উৎসব উৎযাপিত হচ্ছে। জুম্ম জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও জাতীয় প্রাণের উৎসব উপলক্ষে ফুল ভাসানো খেলাধুলা ও সাংষ্কৃতি অনুষ্ঠানসহ আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসব পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জাতীয় অস্তিত্ব, ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। উক্ত উৎসবের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, জাতীয় পরিচিতি ও স্বতন্ত্রতার পরিচয় হিসেবে পাওয়া যায়। এমতাবস্থায় বিবেচনা করে অত্র এলাকার সকল জুম্ম জনসাধরনের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বিঝু, সাংগ্রাই, বৈসুক, বিষু, বিহু বলে।
ফুল ভাসানো মধ্য দিয়ে শুরু হয় তিন দিন ব্যাপি এই উৎসব। মিলনপুর বন বিহার হতে মহালছড়ি উপজেলা পরিষদসহ গুরুত্ব পূর্ণ সড়ক মঙ্গল শোভা যাত্রা ও র্যালী শেষে চেঙ্গি নদী মহালছড়ি থানার সামনে ফুল বাজানো হয়।
চাকমাদের, নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসবের নাম বিঝু। তিন দিন ব্যাপী উৎসবের মধ্য দিয়ে পালিত হয় উৎসবটি। দুই দিন আগে থেকে শুরু হয় নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার উৎসব। এটি এক দিকে যেমন পুরাতন বছরের শেষ মাসকে বিদায়ের পালা, তেমনি নতুন বছরের প্রথম মাসকে বরণেরও প্রস্তুতি। প্রথম দিনে ফুল বিঝু, দ্বীতিয় দিনে মূর বিঝু আর তৃতীয় দিনে উৎযাপিত হয় গোজ্যেপুজ্যে দিন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য পাহাড়ি জাতির মধ্যে এই উৎসব বিভিন্ন নামে পরিচিত। ত্রিপুরাদের বৈসু, মারমা দের সাংগ্রাই, চাকমাদের বিজু, খুমি ও ম্রোদের চাংক্রাই, খিয়াং ও লুসাইদের শাংগ্রাই ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু। নামে যেমন রয়েছে ভিন্নতা, তেমনি রয়েছে উৎযাপনের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা। ঠিক কবে থেকে পাহাড়িদের মধ্যে এই উৎসবের প্রচলন শুরু হয়েছিল, তার নির্দিষ্ট কোন ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানা সম্ভব না হলেও, যুগ যুগ ধরে এই উৎসবটি হয়ে উঠেছে পাহাড়িদের সংষ্কৃতি আর ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। এই উৎসবকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে পারষ্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ।পূর্বের কলহ ভুলে নতুন করে সবাই আনন্দে মেতে উঠেন।
বিঝুর অন্যতম মূল আকর্ষণ হল "পাজন" বিভিন্ন খাদ্যবস্তুর মধ্যে পাজন যেন থাকা চাই চাই। পাজন ছাড়া বিঝু, সে যেন কল্পনাতীত। বিভিন্ন প্রকারের তরকারী দিয়ে রান্না হয় এই "পাজন"। কমপক্ষে ৩৬ পদের তরকারি সবজি দিয়ে রান্না হয়।
সাম্মাডিঠটি ফাউন্ডেশন উদ্যোগে আয়োজিত বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভা যাত্রার উদ্দেশ্য পাহাড়িদের শিক্ষা, সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখা।