রাফি চৌধুরী (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি)
পরিবারের খুব আদরের সন্তান,তাই নাম রেখেছেন স্বাধীন। বাবা জাহাজে থাকার সুবাধে ৩বোনের ছোট ভাইটি সবসময় ছিল স্বাধীন। বাড়ীর পাশেই কুমিরা রোজ গার্ডেন একাডেমি থেকে এসএসসি, ভাটিযারীর বিজয় স্বরনী কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পাশ করে স্বাধীন জাহাজে চাকরির জন্য মার্স মেরিন থেকে সী ম্যানের প্রশিক্ষণ শেষ করে তার বড় মামার মাধ্যমে ব্রাজিলে জাহাজে যাওয়ার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। বাবার স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে জাহাজে পাঠিয়ে একটা সুন্দর বাড়ি করে বিয়ে করাবে ছেলেকে। কিন্তু বাবা মায়ের সেই আশা আর পূরণ হলনা। বাবার চোখের সামনেই লাশ হল ছেলে আর জ্বলসে গেল বাবা। জলসে যাওয়া বাবা স্বাধীন, স্বাধীন বলে জ্ঞান হারাচ্ছে বারবার। এদিকে কুমিরা নিউরাজাপুর তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র ছেলেকে হারিয়া মা তাহমিনা আক্তার বাকরুদ্ধ। আত্মীয়রা আসছে মাকে সান্তনা দিতে। আজ শুক্রবার বিকাল ৩ টায় নিহত স্বাধীনের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ীর উঠানে বেশ কিছু চেয়ার, লোকজন আসছে কিছুক্ষন বসে চলে ডরাচ্ছে,কি বলবে বাসা হারিয়ে ফেলছে।
স্বাধীন এর শোকাহত মামা নিয়াজ মোর্শেদ প্রতিনিধি কে জানান, আমাদের আদরের একমাত্র ভাগিনা বৃহশপতিবার বরিশালের কীর্তনখোলা নদীতে জাহাজের মধ্যে বিস্ফোরণে নিহত হয়। আহত হয় স্বাধীন এর বাবা জাহাজের চীফ ড্রাইভার মোঃ কুতুবউদ্দিন (৬২)।
তিনি আরও জানান ৩বোনের ছোট ভাই ছিল স্বাধীন। মা একমাত্র ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার পথে। আজ শুক্রবার রাতে স্বাধীনের লাশ বাড়িতে পৌঁছবে এবং সব ঠিক থাকলে শনিবার সকালে কুমিরা ডাল-চাল মিঞা (রঃ) মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য,গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকাল ৫ টার দিকে বরিশাল কীর্তনখোলা নদীতে নোঙরকরে রাখা এমটি এবাদ-১ জাহাজে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় স্বাধীনসহ আরো দুইজন মারা গেছে। নিহতরা হলেন আনোয়ার উপজেলার বাসিন্দা জাহাজের গ্রিজারম্যান বাবুল কান্তি দাস ও চট্টগ্রামের বাসিন্দা ক্লিনার কাশেম।
নিহত স্বাধীনের পরিবার সূত্রে আরো জানায় , বরিশালে এমটি এবাদ-১ নামক একটি তেলবাহী জাহাজে চাকুরী করতেন কুমিরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জাহাজের চীপ ড্রাইভার মো.কুতুব উদ্দীন। একমাত্র ছেলে ফারদিন আরাফাত স্বাধীন তার বাবার কর্মস্থলে বেড়াতে গিয়েছিল।
কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার মর্মান্তিক এক তেলের ট্রাংক বিষ্পোরণে ঘটনাস্থলে মারা যান ছেলে স্বাধীন। এ ঘটনায় কুতুব উদ্দীনও গুরুতরু আহত হন। তার হাত-পা জ্বলসে গেছে।বর্তমানে তিনি ঢাকাস্থ শেখ হাসিনা বার্ণ ইউনিটে ভর্তি আছেন।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য স্বাধীন আর নেই এমন কথা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে স্বাধীনের সহপাঠী বন্ধু-বান্ধব, স্কুলের শিক্ষকদের। স্বাধীনের মৃত্যুতে কুমিরার রাজাপুর এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
বরিশাল থেকে কফিন আনার পর স্বাধীনের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হবে – কুমিরা ডাল-চাল মিঞা (রঃ) মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে।