মাহমুদুল হাসান মুক্তা (জামালপুর)
জামালপুরের মেলান্দহে ৭নং চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। তাদের অভিযোগ এই অফিসে ভূমি খারিজ করতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তারপরেও মাসের পর মাস ঘুরতে হচ্ছে। আর কোনমতে খারিজ পেলেও দাখিলার (খাজনা আদায়কৃত রশিদ) জন্য আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা।
সরেজমিনে ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা মিলে মহিরামকুল গ্রামের মৃত খোকা মিযার ছেলে রাসেলের সাথে। প্রচন্ড তাপদহে অফিসের সামনে ঘুরোঘুরি করছেন। তার কাছে ভূমি অফিসের সেবার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক মাস ধরে জমির খারিজের জন্য ঘুরতে হচ্ছে। এখনো খারিজ হাতে পায়নি। আজকেও দেখা করলাম, ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা বললো আরো ১০/১৫ দিন লাগবে। খারিজ করতে কোন টাকা দিতে হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে রাসেল বলেন, ১৫ হাজার টাকা দিয়েছি তাকে। তার সাথে কথা বলতে দেখে সামনে আসেন শিহাটা গ্রামের মৃত জমশের আলী মন্ডলের ছেলে নূর আহম্মেদ। তার অভিযোগ জমি খারিজ করতে কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপাকে ২০ হাজার টাকা দিছি, এখনো খারিজ পাইনি, ঘুরতে ঘুরতে আর ভালো লাগছে না। এই হয়রাণী থেকে বাঁচতে চাই। একই অভিযোগ ওই গ্রামের মৃত খলিলুর রহমান মাষ্টারের ছেলে শফিকুল ইসলামের। ২ মাস আগে জমি খারিজের জন্য ৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে তাকে। আজ দাখিলা হাতে পেলাম। এক হাজার টাকা দিয়েছি দাখিলার জন্য রশিদ পেয়েছেন ২৮ টাকার। বাকি টাকা কোথায় জমা হলো সেটা তিনি জানেন না।
মহিরামকুল গ্রামের মৃত টিএসআই মোহাম্মদ আব্দুল রশিদের ছেলে জিহাদুল ইসলাম বলেন, আমি ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। দাখিলা কাটতে দিয়েছি আরো এক হাজার টাকা। দাখিলার রশিদ পেয়েছি ৩০ টাকার। অনেকের অভিযোগ এখানে আসলে বলা হয় উপজেলা ভূমি অফিসে যান, সেখানে শিফার সাথে দেখা করেন। আর খারিজ পেতে কেউ যদি জোর করে তাহলে মেলান্দহ উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনারকে ডেকে এনে জেলহাজতে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, এই অফিসে মুক্তল নামের এক ব্যক্তি নিজেকে সহকারী নায়েব পরিচয় দিয়ে ভূমি অফিসের কাঁটা তারের বেড়া ভেঙ্গে ভূমি অফিসের জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ফসল চাষাবাদ করে আসছে। এছাড়াও তার বাড়িতে চলে খারিজ করে দেয়ার নামে রফাদফা। তার বাড়ির উঠানে একটি বৈঠক খানাও তোলা হয়েছে। এখানেই নিয়মিত যাতায়াত করতে দেখা যায় ভূমি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপাকে। অভিযোগ রয়েছে, ভূমি অফিসের পুকুরটিও দখলে রেখে মাছ চাষ করছে এই মুক্তল। ৭নং চরবানিপাকুরিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী কর্মকর্তা আয়শা আক্তার নিপা বলেন, এই অফিসে ভূমি খারিজ করতে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয় না।
ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি ঘুষ দূর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।