রাফি চৌধুরী, সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
অভিনব কায়দায় স্বর্গরাজ্যও সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে গত দু'বছর ধরে পবিত্র মক্কানগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কপি শপ,রেস্টুরেন্টে লাভজনক বেতনের লোভনীয় অফারে লোক নিয়োগের নামে সীতাকুণ্ডের অগনিত যুবকদের বাংলাদেশ থেকে এনে শুরু থেকেই টর্চার সেলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে সীতাকুণ্ড পৌরসদরের ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা লিয়াকত আলীর ছেলে ফখরুদ্দিন সুমনের বিরুদ্ধে।
৪নং মুরাদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড দোয়াজিপাড়ার বাসিন্দা বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদার চাচাত ভাই দিদার খান কাঁদতে কাঁদতে ফখরুদ্দীন সুমনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছে তা রীতিমত লৌমহর্ষক ঘটনা বৈ কি! দিদার খান বলেন, যেদিন আসলাম সেদিন একটা রুমে রেখে চলে গেল সুমন। তিনদিন তো কোন খাবারও দেয়নি। তিনদিন পর এসে ভিসার সকল টাকা পরিশোধ করবার পরও আরো অতিরিক্ত পঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে এবং জিম্মি করে রাখে আগত সকলকে।
বেশ ক'দিন এভাবে যাওয়ার পর কোন চাকুরী ছাড়াই রুম থেকে বের করে দেয়া হলো। অনিন্দ্রা, অনাহার, রুম ছাড়াই মক্কার রাস্তায় দুঃশ্চিন্তায় তার হার্টএট্যাকের মত পরিস্হিতির সৃস্টি হলে এক অপরিচিত বাংলাদেশীর দয়ায় এ যাত্রায় তিনি বেঁচে যান এবং ঐ আগুন্তুক প্রবাসীর করুনায় অবৈধ হয়ে এখনো একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করছেন ঝুঁকিতে। যে কোন সময় ধরাপড়ার আতংকে সে কিংকর্তৃব্যবিমূঢ়! যে কোন সময় আইন শৃংখলা বাহিনী ধরে ফেরত পাঠাতে পারে। সে প্রতারক সুমনের বিচার দাবী করছে।
আমাদের সময় পত্রিকার সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুমের ছেলে রাব্বীকে পারিবারিক স্বচ্ছলতা আনয়নের লক্ষ্যে সাংবাদিক পিতা প্রতারক সুমনের ভিসায় মক্কায় পাঠায়।
কথা ছিল মক্কার স্হায়ী চাকুরীর ভিসা এবং বেতন বাংলাদেশী টাকায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু সৌদীতে এসে রাব্বীকে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চাকুরী না দিয়ে এক সাপ্লাই কোম্পানীতে বিক্রি করে দেয়। যেখানে দৈনিক ১৪ঘন্টা কাজ করে বেতন পায় বাংলাদেশী মুদ্রায় মাত্র ২৪ হাজার টাকা।
সৌদীআরবে হাঁড় ভাঁঙা পরিশ্রম করে কলুর বলদের মত খাঁটুনী খেঁটে যে বেতন পায় সে টাকা তার বাসা ভাড়া খাওয়া ধাওয়া নেট ইত্যাদী মিলে খরচ হয়ে যায়। বাড়ীতে মাসে ৫হাজার টাকাও পাঠাতে পারে না সংসারে। বর্তমানে সেও অবৈধ ও দুঃশ্চিন্তায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। নিউজ প্রতিবেদককে কাঁদতে কাঁদতে তার এ দূরাবস্হার জন্য প্রতারক সুমনকে দায়ী করে তার শাস্তির জোর দাবী জানায়। একইভাবে সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল কাইয়ুম চৌধুরী প্রতারক সুমনকে শাস্তির আওতায় আনবার জন্য দাবী জানান।
সম্প্রতি গত দু'মাস পূর্বে সীতাকুণ্ডের ৬নং ইউনিয়নের বাঁশবাড়ীয়ার ইন্জি. মো. ইউসুফের ভাতিজা ও ভাগিনা যথাক্রমে জাহেদ হোসেন ও নাফিস হোসেন রিয়াদকে ঢাকায় মেডিকেল টেস্ট করিয়ে দু'জন থেকে জরুরী ভিত্তিতে ভিসা লাগানোর কথা বলে এক লাখ করে দু'লাখ টাকা অগ্রীম নেয়। ভিসা ভূল লেগেছে, ডলার এন্ডোজ করে ঠিক করেছে কাল বা পরশু ভিসা কপি ও পাসপোর্ট ডেলিভারী পৌঁছানো হবে ইত্যাদী গত এক মাস বলেই যাচ্ছিল প্রতারক সুমন। শেষতক ঢাকার তাদের এজেন্সীর সাকিবের সাথে কথা বলে জানা যায় তার দায়িত্ব কেবল মেডিকেল করানো। মেডিকেল ফিট হওয়ার পর ভিসা লাগানোর দায়িত্ব ছিল প্রতারক সুমনের। সে ভিসা পাঠায়নি তাই সে লাগাইতে পারেনি বলে জবানবন্দি দেয় প্রতিবেদককে।
প্রতারক সুমনের এহেন ঘটনার শিকার এমন আরো অগনিত যুবক আছেন যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে সৌদীআরবে।এমনটি দাবী করছেন দিদার খান ও রাব্বী।
সীতাকুণ্ডের ছেলে হয়ে সীতাকুণ্ডসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষগুলোকে প্রবাসে চাকুরীর নামে এনে হয়রানী ও বিপদগ্রস্ত করছে কেন জানার জন্যে গত দু'দিন ধরে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা,হোয়াটসঅ্যাপ ও টেক্সট ম্যাসেজ দিয়েও প্রতারক সুমনের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
ভূক্তভোগীদের মতে, প্রতারক ফখরুদ্দিন সুমন এর প্ররোচণায় আর একজন মানুষও যেন বাংলাদেশ থেকে সৌদীআরব না আসে এবং তার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্হা গ্রহনে তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞবদ্ধ।
সৌদীআরবের বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন আদম ব্যবসায়ীদের অধিক মুনাফার নেশার খপ্পরে পড়ে নন স্কিল্ড লোকদের এনে যেমন তাদেরকে অবৈধভাবে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হচ্ছে তেমনী সৌদীআরবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হচ্ছে।
বর্তমানে সৌদীআরবের বিভিন্ন শহর উপ-শহরে বাংলাদেশী নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকদেরকেও সৌদীআরবের রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। এমন দু'জন নারী ও দু'জন পুরুষের বক্তব্য আদম ব্যবসায়ীরা আমাদের সুখের স্বপ্ন দেখিয়ে সৌদীআরবের রাস্তায় নামিয়ে দেয়। ভিক্ষা ছাড়া তাদের আর কি বা করার আছে!
প্রতারক সুমনসহ সকল আদম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্হা গ্রহন করবার জন্য সৌদীআরবস্হ বাংলাদেশ দূতাবাস ও দেশীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্হার প্রতি আশু প্রতিকার ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহনে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগীরা।