মাইদুল ইসলাম (গাইবান্ধা প্রতিনিধি)
সারা বাংলাদেশের ন্যায় গাইবান্ধায় ‘ল্যাম্পি স্কিন’ নামে ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গবাদি পশু।
প্রতিষেধক ও প্রতিকার হিসাবে সরকারি ভাবে এখনো ভ্যাকসিন সরবরাহ না থাকায় উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে এ রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এর প্রতিকার হিসাবে গোট পক্সের ভ্যাকসিন দিয়ে এই রোগের স্বাভাবিক চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোছাঃ সুমনা আক্তার। তবে এই চর্মরোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন খামারিরা তবে চিন্তা না করে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের পক্ষ থেকে খামারিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ আব্দুল্লাহেল কাফী।
খামারিদের এই রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা পেতে ইতিমধ্যে সাদুল্লাপুর উপজেলার মোট ১১টি ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে খামারিদের সচেতনতা, সঠিক পরামর্শ ও এই রোগ সম্পর্কে অবহিত করার জন্য খামারি সহ এলাকার মানুষদের লাম্পি স্কিন ডিজিজ এর লিফলেট বিতারণ করা হয়।
জানা যায়, ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ (পক্স জাতীয়) গবাদিপশু, বিশেষ করে গরুর নতুন একটি রোগ এটি। ল্যাম্পি স্কিনের ভাইরাসটির উৎপত্তি আফ্রিকায়। এরপর ভারতে এটি দেখা যায়। সম্প্রতি ভারত থেকে দেশে আসা গরুর মাধ্যমে এই জীবাণু দেশে প্রবেশ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রথমে গরুর চামড়ার উপরি অংশে টিউমার জাতীয় ও বসন্তের মতো গুটি গুটি উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর দু-একদিনের মধ্যেই গরুর শরীরজুড়ে গুটি গুটি হয়ে ঘা এ পরিণত হয়। এ সময় শরীরে ১০৩-১০৭ ডিগ্রী তাপমাত্রার জ্বর দেখা দেয়। মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে এবং গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় গরুর বুকের নিচে পানি জমে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থান পঁচে গিয়ে সেখান থেকে মাংস খুলে খুলে পড়ে। বুধবার (১৯ জুলাই) সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের পাটানোছা গ্রামের ফেরদৌস আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, গত সপ্তাহে হঠাৎ করেই আমার গরুর শরীরে বিভিন্ন স্থান ফুলে উঠা শুরু করে। এরপর গরু খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসক বলছেন রোগ ভালো হতে সময় লাগবে।
আরেক খামারি বলেন, শুধু আমাদের গ্রাম নয় পুরো জেলায় প্রায় অনেকের গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা খুব চিন্তার মধ্যে আছি। জানি না ভাগ্যে কি আছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা বলেন, এটি রোগটি মশা বাহিত ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগের আপাদত কোনো ভ্যাকসিন নেই। আক্রান্ত গরু গুলোকে সাধারণ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।সুস্থ গরু গুলোকে আলাদা করে রাখার পরামর্শ ও মনিটিরিং এর জন্য জোর দেন খামারিদের।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মাছুদার রহমান সরকার বলেন, মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসটি ছড়ায়। তাই আমরা খামারে গিয়ে এর আশপাশ পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। এটি যেন অন্য কোন পশুর মাঝে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য আক্রান্ত গরুকে মশারি দিয়ে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আতঙ্কিত বা ভয়ের কোন কারণ নেই। রোগ সামান্য হলে ৪ থেকে ৫ দিনে ভালো হয়ে যায়। বেশি হলে ২ থেকে ৩ সপ্তাহ লাগে। তাই খামারিদের সচেতন থেকে খামার পরিচালনার পাশা পাশি অন্য খামারিদের এই রোগ সম্মন্ধে অবহিত করে এলাকায় যাতে আর বেশি না ছড়ায় সেক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।