ছবিঃ প্রতীকী
রুহুল আমিন (জেলা প্রতিনিধি) মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জে বলাকা জেনারেল হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ এবং চিকিৎসকের অবহেলায় নাসরিন আক্তার (৩২) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার স্বজনেরা।
নিহত নাসরিন বেগম জেলার ঘিওর উপজেলার নয়ারচর গ্রামের মোঃ রিপন মিয়ার স্ত্রী। সদ্য ভুমিষ্ট পুত্র সন্তান ছাড়াও এগার ও ছয় বছর বয়সী দুইটি কন্যাসন্তান রয়েছে তার।
জানা গেছে, গত সোমবার দুপুরের দিকে চিকিৎসক ওসমান গণির তত্বাবধানে বলাকা জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশন করতে ভর্তি হন নাসরিন বেগম। ওই দিন বিকেল ৫টায় অপারেশন করেন চিকিৎসক মোঃ ওসমান গনি। অপারেশন করার সময় রোগীর রক্তনালী কেটে যাওয়ার পর তাকে সাভারের এনাম মেডিকেল হসাপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় প্রসুতি নাসরিন বেগম।
নিহত নাসরিন বেগমের স্বামী রিপন মিয়া জানান, ‘অপারেশনের সময় আমার স্ত্রীর রক্তনালী কেটে ফেলেছিল। অপারেশনে যে সমস্যা হয়েছে সেটা আমাদের জানায়নি। কয়েক ব্যাগ রক্ত দেয়ার পর সন্দেহ হলে আমি বার বার জিজ্ঞাসা করার পর বলেছে। পরে আমার স্ত্রীকে এনাম মেডিকেলে রেফার্ড করে। এনাম মেডিকেলের চিকিৎসকরা বলেছে, রক্তনালী কেটে ফেলায় প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ কারণে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এখন তিনটা সন্তান নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়ে গেছি। আমি এই অবহেলা ও ভূল চিকিৎসার বিচার চাই।’
বুধবার সকাল ১১টার দিকে বলাকা জেনারেল হাসাপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের গুরুত্বপূর্ণ রুমগুলো তালা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লাপাত্তা হয়ে গেছে। হাসপাতালটিতে কোন রোগী, চিকিৎসক, নার্স বা অন্যান্য কোন স্টাফ নেই। এরপর দুপুর ১টার দিকে নিহত নাসরিন বেগমের পিতার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বলাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের মাধ্যমে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে আপস-মীমাংসার চেষ্টা করছে।
এদিকে অভিযুক্ত চিকিৎসক ওসমান গনি ভূল চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, অপারেশনের আগে ডাঃ মোসলেম উদ্দিন আল্ট্রাসনোগাম করে রিপোর্ট দিয়েছিল। তার রিপোর্টে লেখা ছিলা একরকম আর রোগীর বাস্তব অবস্থা ছিল অন্যরকম। যেকারণে রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা যায়নি। এ কারণে অপারেশনে একটু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। আল্ট্রা রিপোর্টে রোগীর প্রকৃত অবস্থা জানা গেলে এমন জটিল রোগীদের আমরা অপারেশন না করে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করি।
তবে ডাঃ মোসলেম উদ্দিন বলেন, আল্ট্রা রিপোর্ট সঠিক ছিল। এককে রোগীর প্লাসেন্টা একেকরকম অবস্থায় থাকে। প্লাসেন্টা সমস্যার কারণে এত ব্লিডিং হয়না। রক্তবাহী মোটা নালী কেটে গেলে ব্লিডিং আর থামানো যায়না। হয়তো এক্ষেত্রে এই সমস্যা হয়েছে।
বলাকা জেনারেল হাসাপতালের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, ডাক্তারের কারণে রোগী মারা গেছে। এখানে হাসপাতালের কোন গাফেলতি নেই। রোগীর সেবা প্রদানে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। এই রোগীর মৃত্যুর দায় ডাক্তারকেই নিতে হবে।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, রোগীর লোকজন আমাদের কাছে অভিযোগ করলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সরকার বলেন, এ বিষয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।