ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ
মোঃ নুর আলম গোপালপুর(টাঙ্গাইল)প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে ধর্ষনের অপচেষ্টার শিকার হয়ে একবারে চুপসে গেছে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ুয়া এক শিশু শিক্ষার্থী। শিশুটি স্কুল পর্যায়ে ক্রিকেট আর ফুটবল খেলে সবার ভালোবাসা কুড়িয়েছে। এবার সে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট স্ট্রাইকার হিসাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পুরস্কারও পায়।
এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সেই ধর্ষণ অপচেষ্টার মামলার একমাত্র আসামী আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে গলায় মালা ঝুলিয়ে ব্যান্ডপার্টির বাজনার সুরে পুরো গ্রাম মাতিয়ে তোলে। ওই শিশুর মা এবং মামলার বাদীর বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে আসামী ও তার কয়েক আত্মীয় নেচেগেয়ে তোলপাড় করে। এমন ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
গোপালপুর থানা পুলিশ সুত্রে জানা যায়, হেমনগর ইউনিয়নের উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ওই শিশু ছাত্রীকে গত ২৪ জুলাই দুপুরে কাঁঠাল খাওয়ার লোভ দেখিয়ে নির্জন বাড়িতে নিয়ে ধর্ষনের অপচেষ্টা চালায় গ্রামের মুদী দোকানী আলেফ শেখ। কান্নাকাটির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে আলেফ শেখ পালিয়ে যায়। ওই দিন বিকালে থানায় মামলা হলে পুলিশ আলেফ শেখকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়।
মামলার বাদী এবং ভিক্টিমের মা রেজিয়া খাতুন আজ শনিবার গোপালপুর থানায় দায়ের করা এক অভিযোগে জানান, গত বৃহস্পতিবার আদালত থেকে জামিন নিয়ে রাত নয়টায় আলেফ শেখ গলায় মালা পরিহিত অবস্থায় ব্যান্ডপার্টি নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করে। ব্যান্ডপার্টির সাথে তার আত্মীয় শিপন মিয়া, করিম মিয়া,আয়নাল হক সহ শতাধিক উৎসুক মানুষ যোগ দেন। তারা নেচেগেয়ে পুরো গ্রাম প্রদক্ষিণ করে। এক পর্যায়ে আলেফ শেখ দলবল নিয়ে বাদীর বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করে নর্তন কুর্তন শুরু করে। পাশাপশি গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় দিন মজুর বাবামা অসহায় ভিক্টিম শিশুটিকে নিয়ে নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। পুলিশের সহযোগিতা চাচ্ছেন।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার এবং উড়িয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা আলীম হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। রাত দশটায় ব্যান্ডপার্টি এবং কিছু মানুষের হৈহুল্লোড়ের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়। বাইরে বেরুলে আলেফ শেখের কয়েক অনুসারী জানান, মিথ্যা মামলায় এক মাস জেলহাজত খাটার পর শেখ সাহেব জামিন পেয়েছেন। তাই মনের সুখে তারা সবাই ব্যান্ডপাটির সুরে আনন্দ প্রকাশ করছেন। তিনি আরো জানান, ধর্ষনের অপচেষ্টার পর ছোট্র শিশুটি এমনিতেই মুষড়ে পড়ে। গতকালের ঘটনার পর ওই শিশুসহ পুরো পরিবার আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
একই গ্রামের বাসিন্দা সাহার আলী, ইব্রাহীম খলিল ও মকবুল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, শিশু নির্যাতনের মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়ে গলায় মালা জড়িয়ে ব্যান্ড পার্টির বাদ্যের তালে নেচেগেয়ে এমনভাবে আনন্দ করাটা কোন সভ্যতার পর্যায়ে পড়েনা। শেখ সাহেব প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করার সাহস পায়না।
উড়িয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শামসুন্নাহার এবং আসিয়া বেগম জানান, শিশুটি খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বেশ আগুয়ান। এমন ঘটনায় শিশুটি এমনিতেই নিস্প্রভ হয়ে গেছে। কয়েকদিন সে স্কুলে আসেনি। ব্যান্ডপার্টির ঘটনায় ওই শিশু আর তার অসহায় পরিবার নিরপত্তাহীনতায় ভুগছে। এসবের প্রতিকার হওয়া দরকার।
ব্যান্ডপার্টির প্রধান কালিহাতী উপজেলার পশ্চিম নারান্দিয়া গ্রামের বাসিন্দা অনিক লাগাচি জানান, উড়িয়াবাড়ী গ্রামের আলেফ শেখ গত বৃহস্পতিবার ধর্ষণ অপচেষ্টা মামলায় আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। শেখ সাবের আইনজীবি এডভোকেট রবিউল হাসান রতন আমাদের ব্যান্ড পার্টিকে তিন হাজার চারশ টাকা ভাড়ায় হায়ার করেন। রাত নয়টায় আমরা ওই গ্রামে যাই। রাত ১২টা পর্যন্ত সারা গ্রাম ঘুরে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে সকলকে আনন্দ দেই।
হেমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ধর্ষণ অপচেষ্টা মামলায় জামিন পেয়ে কোন আসামী এভাবে বাদ্য বাজনা বাজিয়ে আনন্দ উৎসব করেন বলে আমার জানা নেই। এতে ভিক্টিম শিশুটি আরো নিরাপত্তাহীনতা এবং সম্মানহানির অবস্থায় পড়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জুয়ারা ময়না জানান, তালিকাভূক্ত শিশু ফুটবলার ও ক্রিকেটারকে এ বাচ্চাটি মানসিকভাবে শকট হওয়ায় আমরা তাকে হয়তো হারাতে বসেছি। তিনি এ ঘটনার তদন্ত এবং শাস্তি দাবি করেন।
মামলার তদন্তকারি অফিসার হেমনগর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবইন্সপেক্টর বশির আহমেদ জানান, জামিন পাওয়ার পর বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গ্রামে আনন্দ উৎসব করার অভিযোগ সত্য। এমনটি কখনো প্রত্যাশিত নয়। ধর্ষণ অপচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলার সত্যতা মিলেছে। দুই একদিনের মধ্যেই আদালতে চার্জশিট দেয়া হবে।
গোপালপুর থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানান, বাদ্যযন্ত্র বাজানো কালে আসামী দলবল নিয়ে বাদী ও ভিক্টিমের বাড়িতে চড়াও হয়ে গালিগালাজ ও মারপিটের হুমকির অভিযোগ এনে থানায় জিডি করা হয়েছে। পুলিশ এর তদন্ত করবে।