ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ
নুর হোসেন- চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে সফল হয়েছেন ইকবাল হোসেন সোহেল। প্রথমবারের মতো এ ফলের চাষ করে সবাইকে চমকে দিয়েছেন। তার দেখাদেখি অনেকে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চাষের শুরুতে এলাকার লোকজন যারা তাকে তিরস্কার করেছেন, এখন তারা প্রশংসা করছেন।
ইকবাল মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের মসজিদিয়া গ্রামের জামশেদ আলমের ছেলে।জানা গেছে, গত বছর বাড়ির অদূরে ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে শীতকালীন টমেটো ও শসা চাষ করেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো ওই জমিতে গ্রীষ্মকালীন মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেন ইকবাল। চলতি বছরের জুলাই মাসে জমি প্রস্তুতের পর বীজ বপন করেন। এখন বাজারে বিক্রির অপেক্ষায় আছেন। তরমুজ চাষে নেওয়া হয়েছে মালচিং ও অর্গানিক পদ্ধতি।সরেজমিনে জানা যায়, ২৫ শতক করে পাশাপাশি দুটি জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। ক্ষেতের চারদিকে নেট দিয়ে ঘের দেওয়া হয়েছে। মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করা প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় তরমুজ ঝুলছে। প্রতিটি তরমুজে প্যাকেট দিয়ে আটকানো আছে। বিভিন্ন আকার ও রঙের তরমুজ দেখা যাচ্ছে। ছোট ভাই ও দুজন লোক সঙ্গে নিয়ে ক্ষেত পরিচর্যা করছেন ইকবাল। পোকামাকড় দমনে ব্যবহার করা হচ্ছে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কার্ড।ইকবাল হোসেন সোহেল বলেন, ‘এইচএসসি পাসের পর মিরসরাই পৌর সদরে একটি গার্মেন্টস সামগ্রীর দোকান দিয়েছিলাম। মোটামুটি ভালো চলছিল। কিন্তু করোনাকালে ব্যবসা পরিস্থিতি খুব খারাপ হয়। এরপর আর স্বাভাবিক হয়নি। তখন ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আধুনিক কৃষির বিষয়গুলো দেখতে থাকি। এরপর স্থির করলাম কৃষিকে পেশা হিসেবে নিতে হবে। তখন বাড়ির অদূরে ৫০ শতক জায়গা বর্গা নিয়ে গত বছর শীতকালীন টমেটো ও শসা চাষ করেছি। এরপর জমি খালি হওয়ার পর ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ শুরু করেছি।’
তিনি বলেন, ‘উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ১০ ব্যাগ বীজ, মালচিং ও ফেরোমন ফাঁদ দিয়েছে। সম্পূর্ণ অর্গানিক ও মালচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে ক্ষেত। এখানে ইয়েলো গোল্ড, ব্ল্যাকবেরি, তৃপ্তি জাতের তরমুজ চাষ করা হয়েছে। পাশাপাশি কিছু রক মেলন জাতের বাঙ্গিও চাষ করা হয়েছে। গাছের পরিচর্যার জন্য দেওয়া হয়েছে মালচিং পেপার। উপরে মাচা দিয়ে ফল প্যাকেটজাত করে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ইকবাল আরও বলেন, ‘কৃষি অফিসের সহযোগিতা ছাড়া আমার প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিটি তরমুজ ১-৪ কেজি ওজন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি শুরু করবো। বিভিন্ন জায়গায় ভালো দামের পাইকার খুঁজছি। এখন বাজারে প্রতি কেজি তরমুজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আশা করছি ৫০ শতক জমিতে প্রায় ৪ টন তরমুজ হবে। ন্যায্যমূল্য পেলে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করা সম্ভব।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ অঞ্চলের মাটি তরমুজ চাষের জন্য উপযোগী। ইকবাল প্রথমবারের মতো গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। আমরা কৃষি অফিস থেকে সব ধরনের সহযোগিতার পাশাপাশি ক্ষেত পরিদর্শন করি। গ্রীষ্মকালীন তরমুজ উচ্চমূল্যের ফসল হওয়ায় ইকবালের পাশাপাশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন কৃষকেরা।’