ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মাদারগঞ্জ
জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়েই চলছে ৭৪ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর কার্যক্রম।
মাদারগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে মাদারগঞ্জ উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ২০২ টি এরমধ্যে ১৯৯ টি সরকারি, ২ টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং ১ টি মির্জা আজম শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়-১০২, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে ।
৭৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক এর পদ শূন্য রয়েছে। ভারপ্রাপ্তে চলছে ৭৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে ৩৫ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে কিছু কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি একদমই নগণ্য। সেসব স্কুলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক যদি থাকে ৮ জন উপস্থিত থাকে ৫/৬ জন। শিক্ষার্থী উপস্থিতি কোন শ্রেণিতে ১ জন, ৩ জন কিংবা ৫ জন। উপস্থিতি কম থাকার ফলে শিক্ষকরাও ক্লাস নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কয়েকজন মাঠে খেলছে। শিক্ষকরা অলস সময় কাটাচ্ছে। এসব বিদ্যালয় গুলোতে সরকারি সুবিধার কোন কমতি নেই। রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন,খেলার মাঠ, শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ, উপবৃত্তি, পরীক্ষার ফিস ফ্রি সহ অন্যান্য সুবিধা। যেসব স্কুলে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম সেসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করার নেই কোন পরিকল্পনা বা উদ্যোগ। পরিকল্পনা থাকলেও শুধু খাতা কলমে, নেই কোন বাস্তবায়ন।
তবে ঐসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা ফরমালিটি বলেন আমরা নিয়মিত মিটিং করছি ও বাড়ী বাড়ী খোঁজ নিচ্ছি। মির্জা আজম শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহব্বত হোসেন এরশাদ বলেন আমাদের বিদ্যালয়টি সরকারি নয় তবে বেতন ভাতাদি সরকারি প্রাথিমক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যা পান আমরাও তাই পাই। বিদ্যালয়টি শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত হচ্ছে । নলছিয়া এ.কে. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এ.টি.এম বাবুল বলেন অত্র বিদ্যালয়ে শুরু থেকেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করে আসতেছি। পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষক এর জন্য ২০১৮ সালে মামলা করেছি বর্তমানে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। কোয়ালিকান্দি আর্দশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার কনা বলেন আমার পূর্বে যিনি ছিলেন উনিও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থেকে গত ৫ অক্টোবর/২৩ অবসর নিয়েছেন। আমি ৬ অক্টোবর/২৩ থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা নিয়মিত মিটিং ও হোম ভিজিট করি। শিক্ষার্থী উপস্থিতিও ভালো। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি বাড়াতে হলে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে হবে জানতে চাওয়া হলে চাঁদপুর সন্ধাজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর অবসর নেওয়া প্রধান শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান বলেন ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীরা কেন স্কুলে আসে না বাড়ী বাড়ী গিয়ে শিক্ষকরা সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং ছেলে মেয়েদের স্কুলে আসার জন্য অভিভাবকরা উৎসাহ দিবেন এমন পরামর্শ দিতে পারে শিক্ষকরা। আমি মনে করি উপবৃত্তি বন্ধ করে স্কুল ফিড়িং কিংবা মিড ডে মিল চালু করলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়বে।
উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ সোহেল মাহমুদ বলেন আমি বালিজুড়ী ও ফাজিলপুর ক্লাস্টারের দায়িত্ব পালন করছি। ৭০ টি স্কুলের মধ্যে মাসে গড়ে ১০ টি পরিদর্শন করা হয়। জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা তো সহকারী শিক্ষকের বেতন ভাতাদি পাচ্ছেন সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালনে কমতি আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন সহকারী শিক্ষকের দায়িত্বের পাশাপাশি, উনি প্রধান শিক্ষকের যে দায়িত্ব গুলো তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে পালন করতেছেন। বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি কম জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন বিদ্যালয় কেন্দ্রিক পাশ্ববর্তী কিন্ডার গার্টেন স্কুল রয়েছে , তাছাড়া পূর্বের তুলনায় বিদ্যালয় গুলোতে শিক্ষার্থী উপস্থিতি দিন দিন বাড়তেছে। উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ছাইদুর রহমান বলেন মাদারগঞ্জে আনুমানিক ৭৪ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এর দায়িত্ব পালন করছেন এর মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রধান শিক্ষকের জন্য ৩৫ টি’র মত আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এটিও পদ ৩ টি শুন্য থাকায় আমাদের কাজ বেড়ে গেছে।
মাদারগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূরুল আমিন বলেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মোট কতটি এই মুহুর্তে বলতে পারবো না, অফিসে গিয়ে দেখে বলতে হবে। শিক্ষকদের আমরা নিয়মিত মাসিক মিটিংয়ে এবং বিদ্যালয় পরিদর্শন করার সময় বলে থাকি শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করার জন্য বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের পরিবারে খোঁজ নিতে এবং সমস্যা চিহ্নিত করতে হবে। উপজেলা শিক্ষা অফিসে ৬ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে ৩ টি সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) পদ শুন্য রয়েছে। পদ শুন্য থাকার ফলে ৩ জন সহকারী শিক্ষা অফিসার বিদ্যালয় পরিদর্শন সহ সার্বক্ষনিক তদারকি ও দায়িত্ব পালনে হিমশিম খাচ্ছে।