ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ
একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় একটি দিন। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, এখন এটি সারা বিশ্বের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল, অহংকারে মহিমান্বিত চিরভাস্বর এই দিনটি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল ঔপনিবেশিক প্রভুত্ব ও শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বাঙালির প্রথম প্রতিরোধ এবং জাতীয় চেতনার প্রথম উন্মেষ।
ছাত্ররা ছোট ছোট দলে মিছিল নিয়ে ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্য করে। এমনকি ছাত্রীরাও এ আক্রমণ থেকে রেহাই পায়নি। ছাত্রছাত্রীরা পুলিশের দিকে ইটপাটকেল ছোড়া শুরু করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের সামলাতে ব্যর্থ হয়ে গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসরমাণ মিছিলের ওপর পুলিশ গুলি চালায়।গুলিতে আব্দুল জব্বার রফিক উদ্দিন আহমেদ ও আবুল বরকত নিহত হয়। বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে। উপায়ন্তর না দেখে ২২ ফেব্রুয়ারি নুরুল আমিন সরকার তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদ বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
একুশে টিভির সেবা সংগঠন একুশে ফোরামের উদ্যোগে নির্মিত সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার গোপিনাথপুরে শহীদ মিনারে ১১তম বারের মত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বর্ণাঢ্য ভাবে পালন করলো ভাষা মতিনের এলাকার সর্বস্তরের মানুষ।
বুধবার সকালে একুশে ফোরামের শহীদ মিনারে একে একে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রোদ্ধা জানান, সিরাজগঞ্জ একুশে ফোরামসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষকেরা।
এসময় একুশে ফোরামের সভাপতি আখতারুজ্জামান তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক ডনু, প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম মন্ডল, প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দিবসটি উদযাপনে নানা প্রস্ততি গ্রহন করে মানবিক সেবা সংগঠন ইটিভি একুশে ফোরাম। শহীদ মিনারের আশপাশের বট মেহগুনি, কড়ই, আম গাছে আলোকসজ্জার জন্য লাগানো হয় রং-রংগের ফানুস। বুধবার অনুষ্ঠানে শহীদ মিনারে ফুল দেবার পাশাপাশি ছিল স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের কবিতা ও চিত্রাংকন প্রতিযোগীতা।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে একুশে ফোরামের উদ্যোগে নির্মিত শহীদ মিনারের পরিপুর্ন পবিত্রতা রক্ষাকারী এ শহীদ মিনারটি রক্ষাবেক্ষনে রয়েছে আলাদা কমিটি। যারা প্রতিদিন ২ বেলা শহীদ মিনারটি পরিচ্ছন্ন করা এবং সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন সাবান-পানি দিয়ে ধৌত করা হয়। এখানে প্রতিরাতে ১২টি বৈদতিক বাতিতে আলোকিত থাকে এর পুরো প্রাঙ্গন।
এছাড়া দেশের অন্যতম এ পরিচ্ছন্ন শহীদ মিনারটিতে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আহ্বায়ক ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে।
মাতৃভাষার সুরক্ষা, বিকাশ এবং অনুশীলন ছাড়া কোনো জাতি অগ্রসর হতে পারে না, বাঙালি জাতি তো নয়ই। আর এভাবেই বাংলা ভাষা দিনে দিনে হয়ে উঠছে বিশ্বায়নের অন্যতম মাধ্যম।