বাকিরুল ইসলাম (নিজস্ব প্রতিবেদক)
জামালপুরে মেলান্দহে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কাটিয়ে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধান কেটে ঘরে তোলার কাজ শেষের দিকে। তবে ধানের দামের চেয়ে শ্রমিকের মূল্য বেশি হওয়ায় বিপাকে চাষীরা । এক মণ হাইব্রিড জাতের মোটা ধান বিক্রির টাকায় এক কেজি গরুর মাংসও কেনা যাচ্ছে না বলে দাবি কৃষকদের।
কৃষক বিপুল মিয়া বলেন- গত বছর ১১-১৩ শ’ টাকায় ধান কাটছেন তিনি। এ বছর ৯ শ’ থেকে ১ হাজার টাকা দরে রোজ ধান কাটছেন। তাও আবার মেলান্দহ শিমুল তলা মোড় থেকে কামলা (শ্রমিক) কে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ক্ষেতে আনতে হয়, আবার যাওয়া সময় গাড়ি ভাড়া দিয়ে দিতে হয়।
জানা যায়, বাজারে ৪২ কেজিতে মণ হিসাবে এক মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা দরে। এতে উপজেলার কৃষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
উপজেলার ৫নং নয়ানগর ইউনিয়নের পূর্ব মালঞ্চ গ্রামের কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, এভাবে সংসার চালানো যায় না। এক মণ ধান বিক্রি করে এক কেজি গরুর মাংসও কেনা যায় না। ধান বিক্রি করে কামলা (শ্রমিক) খরচ আর জমির মালিকদের ঋণ দিতে দিতেই টাকা শেষ।
মেলান্দহে বাজারে ৫০ মণ ধান বিক্রি করেন কুলিয়া গ্রামের বাবুল শেখ। তিনি বলেন, আমি ৪২ কেজি মণে ৭৪০ টাকা দরে ধান বিক্রি করেছি। ঢলকের নামে মণপ্রতি ২ কেজি অর্থাৎ ৫০ মণ ধানে আড়াইমণ (১০০ কেজি) বেশি দিতে হয়েছে। প্রতি মণে ২ কেজি ধান বেশি নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
কৃষক আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে তারা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কম বলে। মহাজনদের ঋণ পরিশোধ ও ধান কাটার খরচ মেটাতে আমাদের বর্তমানে লোকসানে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
ঢলকের নামে ২ কেজি ধান বেশি নেওয়ার প্রথার বিলুপ্তি চান কৃষকরা। তারা বলেন, নানা শর্তের বেড়াজালে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত মূল্যে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে পারেন না। তাই আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মাঠপর্যায়ে অস্থায়ী সরকারি ধান ক্রয় কেন্দ্র করে কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি কাঁচা ধান কেনার দাবি জানান তারা।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবদুল্লাহ আল-ফয়সাল বলেন, মেলান্দহ উপজেলায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে কৃষি শ্রমিকের দাম চড়া থাকায় কৃষকদের ধান গোলায় তুলতে খরচ বেশি পড়েছে। ধানের দাম কম থাকায় চাষিরা কিছুটা বিপাকে পড়েছেন।