রাফি চৌধুরী, সীতাকুণ্ড
নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে অন্তত চারটি এলাকায় বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কিছুটা কমতে শুরু করলেও এখনো পানিবন্দী উপজেলার অনেক এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের তুলনায় ছয় ফুট বেড়ে গেছে। জোয়ারের প্রবল স্রোতে বেড়িবাঁধের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সিকদার খাল, আকিলপুর সৈকত, কুমিরা ইউনিয়নের আলেকদিয়া ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় অন্তত চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপকূলে বেড়িবাঁধ রয়েছে ২৫ কিলোমিটার।
গত শুক্রবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আকিলপুর সৈকতের দুটি স্থানে প্রবল জোয়ারের আঘাতে কাঁচা বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রস্থ এক ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে সেটি ভেঙে যেতে পারে। অন্তত ১০টি স্থানে ব্লক সরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্লক বেড়িবাঁধ। সোনাইছড়ি ইউনিয়নের ঘোড়ামরা এলাকায় একাধিক স্থানে বিলীন হয়ে গেছে বেড়িবাঁধ। বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের সিকদার খালের স্লুইসগেট এলাকায়ও বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।
আকিলপুর এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, তাঁদের এলাকায় সাগর থেকে বালু তোলার কারণে কাঁচা বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানি আবার বাড়লে দুটি স্থানে বাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানি ঢুকে আশপাশের লোকালয় ডুবে যাবে।অপর বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত বছর ঘূর্ণিঝড়ে আকিলপুর সৈকতের ব্লক বেড়িবাঁধের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গেল দুই মাস আগে সেখানে সংস্কারের নামে কিছু বালু দিয়ে এর ওপর ব্লক বসান ঠিকাদারের লোকজন। সেই অংশটিতে আবারও ব্লক সরে গিয়ে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীতাকুণ্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী এস এম তারেক বলেন, সীতাকুণ্ডের উপকূলীয় স্লুইসগেটগুলো পুনর্নির্মাণ এবং বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেটি পাস হলে নতুন করে কাজ করা হবে। কিন্তু বর্ষায় বেড়িবাঁধ কোনো প্রকারে টিকিয়ে রাখায় তাঁদের জন্য চ্যালেঞ্জিং। এ লক্ষ্যে বেড়িবাঁধ সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আকিলপুর এলাকায় যে ব্লক বসানো হয়েছে, তা আকারে তুলনামূলক ছোট। এগুলো সাধারণত ঢেউ নেই এমন নদী এলাকায় ব্যবহার করা হয়। এই ধরনের ব্লক বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের উপযোগী নয়। ঢেউয়ের চাপ সামাল দিতে হলে নতুন করে ভারী ব্লক তৈরি করে এরপর বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ বা মেরামত করতে হবে।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বারৈয়ারঢালা ইউনিয়ন এবং পৌর সদরের কিছু অংশ জমে থাকা পানি নামতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হলে জমে থাকা পানি পুরোপুরি নিষ্কাশিত হতে আরও দু-এক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
গতকাল বিকেল থেকে সীতাকুণ্ডে তেমন বৃষ্টি হয়নি। ফলে পানি অন্তত এক ফুটের মতো কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখনো কোথাও-কোথাও রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে রয়েছে। সৈয়দপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তাঁর এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে রয়েছেন। পাহাড়ি ঢল ছাড়াও মিরসরাই এলাকা থেকে পানি প্রবাহিত হয়ে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আজ সকাল পর্যন্ত এলাকায় অন্তত এক ফুট পানি নেমেছে। অনেকের বাড়ি ঘর থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।
গুলিয়াখালী এলাকার ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, তাঁরা গতকাল স্বেচ্ছাশ্রমে ঝুঁকিতে থাকা বেড়িবাঁধ ঠেকিয়েছেন। একদিকে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি, অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলের কারণে তাঁদের এলাকা ডুবে গিয়েছিল। এখন জোয়ারের উচ্চতাও কমেছে, বৃষ্টিও বন্ধ হয়েছে। এতে পানি নামতে শুরু করেছে। পুরোপুরি পানিনিষ্কাশিত হতে আরও দু-এক দিন সময় লাগবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, সীতাকুণ্ডের উত্তর অংশের পাঁচটি ইউনিয়নের কৃষিজমি এখনো পানির নিচে ডুবে আছে। পানি নামলে কৃষির ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা যাবে।