টাঙ্গাইলের গোপালপুর থেকে চিকিৎসার জন্য অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে রাজধানীর একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন ফারুক হোসেন ও মহসিনা সিদ্দিকী দম্পতি। সঙ্গে ছিলেন মহসিনার বড় বোন মাহফুজা বেগম। তাঁদের বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকার অদূরে সাভারে পৌঁছালে সড়ক বিভাজকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। পরে পেছন থেকে দুটি বাস ধাক্কা দিলে অ্যাম্বুলেন্সটিতে আগুন ধরে যায়। এতে দগ্ধ হয়ে পরিবারটির চারজন মারা যান।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে সাভার উপজেলার ফুলবাড়িয়া পুলিশ টাউন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত গ্রামের স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেন সিদ্দিকী (৫০), তাঁর স্ত্রী মহসিনা সিদ্দিকী (৩৮) ও ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী (১৪) এবং মহসিনার বড় বোন সীমা আক্তার (৪০)।
নিহত ফারুক হোসেন সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার ফাহিম সিদ্দিকী নামে ১১ বছর বয়সী আরেকটি ছেলে আছে। নিহত মাহফুজার স্বামী মোঃ শাহিনুর আলম রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানার কনস্টেবল।
তিনি বলেন, গতকাল রাতে টাঙ্গাইল থেকে ফারুক ও শ্যালিকা মহসিনা তাঁদের ছেলেকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে আসছিলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রী মাহফুজাও ছিলেন। সাভারে আসার পর সড়ক দুর্ঘটনা তাঁদের জীবন কেড়ে নিয়েছে। সর্বশেষ রাত ১২টার দিকে মুঠোফোনে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। সকালে ল্যাবএইড হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা ভর্তি হননি। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাঁদের লাশ দেখতে পান।
এদিকে দুর্ঘটনায় একই পরিবারের চারজন নিহতের ঘটনায় টাঙ্গাইল ঘাটাইলের ভবনদত্ত গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্থানীয় লোকজন জানান, সকাল সাতটার দিকে তাঁদের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছে। তখনই স্বজনেরা কান্নাকাটি শুরু করেন। কান্না শুনে প্রতিবেশীরা মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। মুহূর্তেই পুরো গ্রামে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। গ্রামবাসীরা শোক জানাতে আসতে শুরু করেন স্কুলশিক্ষক ফারুক সিদ্দিকীর বাড়িতে। বাড়ির সামনে স্বজন ও গ্রামবাসীর ভিড়।
চারজনের মরদেহ এখনো গ্রামে আসেনি। দাফনের প্রস্তুতি চলছে। নিহত ফারুকের ভাই মামুন সিদ্দিকী বলেন, বড় ভাইয়ের ছেলে ফুয়াদ ভবনদত্ত উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়তো। রক্ত-সংক্রান্ত সমস্যায় আগেও ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছে। ফুয়াদ মায়ের সঙ্গে শুক্রবার নানার বাড়ি গোপালপুরের মাকুল্যা গ্রামে অবস্থান করছিল। রাতে শারীরিক জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসক ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। গোপালপুর থেকে ফুয়াদের মা ও খালা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ভাই ঘাটাইলের হামিদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন।
ফারুক সিদ্দিকীর চাচাতো ভাই জাকির হোসেন সিদ্দিকী বলেন, এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। ফারুক ভাইয়ের ছোট ছেলে ফাহিম (১১) বেঁচে আছে। বাবা-মা-ভাইকে হারিয়ে ও কীভাবে বাঁচবে?’
স্বজনেরা জানান, ঢাকায় আইনি প্রক্রিয়া বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শেষ হয়েছে। চারজনের লাশ নিয়ে বিকেলেই রওনা হওয়ার কথা। পৌঁছানোর পরেই গ্রামে দাফন করা হবে।