মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শ্রীবরদীতে উদ্বোধন হলো ব্যারিষ্টার কাপ শর্টপিচ নাইট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট- সিজন ২ মাদারগঞ্জে ৭ দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা উদ্বোধন করলেন ডিআইজি ড.আশরাফুর রহমান  গোপালপুরে জামায়াতে ইসলামীর বিজয় র‌্যালী গোপালপুরে নানা আয়োজনে বিজয় দিবস পালন  টেলিভিশন ক্যামেরা জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন জামালপুর শফিকুল সভাপতি, শান্ত সাধারণ সম্পাদক জামালপুর জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা তহবিল বৃদ্ধি বিষয়ে কর্মশালা ও গণ নাটক অনুষ্ঠিত  মাদারগঞ্জে নাশকতা মামলায় যুবলীগ নেতাসহ অন্যান্য মামলায় ৪ জন আটক  শ্রীবরদী ছাত্রদলের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন কালিয়াকৈর এশিয়া ছিন্নমূল মানবাধিকার বাস্তবায়ন ফাউন্ডেশন এর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন কালিয়াকৈরে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত

১৯৯১ সালে যারা স্বজনদের হারিয়েছে, “মোখা” তাদের ঘুম কেড়ে নিয়েছে

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ১৪ মে, ২০২৩
  • ৮৩ Time View
ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ 

রাফি চৌধুরী (সীতাকুণ্ড, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি) 

১৯৯১ সালের ২৯ শে এপ্রিল, সেই জলোচ্ছাসের ভয়ংকর রাত মনে পড়লে গা কেমন যেন শিউরে উঠে, সীতাকুন্ড সহ উপকূলবাসীরা ৩২ বছর পেরিয়ে গেলেও ভুলতে পারেনি সেই রাতের দুঃসহ স্মৃতি। ১৯৯১ সালের এইরাতে সীতাকুণ্ড সহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ‘ম্যারি এন’ নামক মানব খেকোটি।

সেদিন মধ্যরাতে আঘাতহানা এ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গিয়েছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, এতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল পুরো উপকূল। লাশের পরে লাশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল চারদিকে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল পরিণত হয়েছিল ধ্বংস্তূপে।

সেদিন উপকূলে আঘাত হানা ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি (১৫৫ মাইল/ঘণ্টা)। এর প্রভাবে সৃষ্ট ২০/৩০ ফুট) উঁচু জলোচ্ছ্বাসে সেদিন সীতাকুণ্ডের ছলিমপুর, ফৌজদারহাট, ভাটিয়ারী,সোনাইছড়ি,কুমিরা,বাঁশবাড়িয়া,বাড়বকুণ্ড, মুরাদপুর,সৈয়দপুর ইউনিয়নের উপকূলগুলোতে বেশী আঘাত করেছিল।

প্রলয়ঙ্কিয় এই ধ্বংসযজ্ঞের ৩২ বছর হয়ে গেল, এখনো স্বজন হারাদের আর্তনাদ থামেনি। ঘরবাড়ি হারা এলাকার মানুষ এখনো অরক্ষিত উপকূলে বর্ষায় নির্ঘুম রাত কাটান। এবার মোটা যাক্রমনের সংবাদে উপকূলে স্বজনহারাদের চোখে ঘুম নেই।তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, স্থায়ী বেড়িবাঁধের মাধ্যমে উপকূল নিরাপদ করা যা এখনো পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ হয়নি। গত শনিবার থেকেই হালা বাতাস বইতে শুরু করেছে,আজ রবিবার আক্রমনের বাতাস বইলে শুরু করলে উপকূলীয় জনগণ আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।

উপকূলীয় সমুদ্রের হিংস্র ভয়ানক আক্রমনের ভয়ে রাতে ঘুমাতে পারে না অজানা শঙ্কায় সীতাকুন্ডের উপকূলীয় এলাকার প্রায় আড়াই লাখ ভিটা বাড়ী, স্বজনহারারা যখন পরিবারের সদস্যদের কথা মনে পড়ে রাতে ঘুম হয়না,বাঁধের উপর আসলেই বেশী মনে পড়ে।তখন সাগরের দিকে তাকিয়ে স্বজনদের খুঁজে।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল সলিমপুর থেকে সৈয়দপুর পর্যন্ত ৯টি ইউনিয়ন।

প্রায় ২২৫ কিলোমিটার গতিবেগ সম্পন্ন ও ৩০–৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূল পরিণত হয়েছিল বিরাণ ভূমিতে। এসময় মারা যায় এলাকার প্রায় সাত হাজার মানুষ। নিখোঁজ হয়েছিল প্রায় তিন হাজার শিশু ও নারী-পুরুষ। প্রায় তিনশ কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়েছিল।

এখনো এলাকার প্রায় আড়াই লাখ মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে।সলিমপুর সৈয়দপুর, কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারীসহ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকা ঘুরে বিভিন্ন লোক অভিযোগ করেন, কিছু কিছু স্থানে বেড়িবাঁধ নির্মিত হলেও তা বছর যেতেই বাঁধ ভাঙতে শুরু করে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহদাৎ হোসেন প্রতিনিধি কে জানায়, ১৯৯১ সালে ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক প্রাণহানির পর আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অর্থায়নে সীতাকুণ্ড এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সীতাকুন্ডের পৌর এলাকাসহ ৯টি ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকায় শতাধিক আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের কথা থাকলেও হয়েছে মাত্র ৫৬টি।

কুমিরা, বাঁশবাড়িয়া, সোনাইছড়ি, ভাটিয়ারিসহ কয়েকটি উপকূলীয় এলাকা ঘুরে বিভিন্ন লোকের সাথে কথা বললে তারা প্রতিনিধি কে জানায়, ১৯৯১ সালে জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক জান মালের ক্ষতির পর উপকূলীয় এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের নামে কয়েক’শ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বাঁশবাড়িয়ার বোয়ালিয়াকূল বেড়িবাঁধ দীর্ঘদিন পর সংস্কার হলেও এর স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক বছর না যেতেই বাঁধটি পুনরায় ভাঙ্গে যায়।

ভাটিয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ নাজিম উদ্দিন বেঁড়িবাধ প্রসঙ্গে প্রতিনিধি কে বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি ভরা বেড়িবাঁধ সংস্কার,আজ বাইরে কালই চলে যাচ্ছে সাগরে।

সম্প্রতি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বোয়ালিয়াকূল থেকে আকিলপুর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার বেডিবাঁধ সংস্কার করলেও নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে এটি আবার ভেঙ্গে গিয়েছে প্রায়।
সলিমপুর থেকে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকা দেখা গেছে, শিপইয়ার্ড নির্মাণ করতে গিয়ে ওইসব এলাকায় বনায়ন ধ্বংস করা হয়েছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহিম প্রতিনিধি কে জানান, উপকূলীয় এলাকার মানুষের অনুপাতে আশ্রয় কেন্দ্র অপ্রতুল।

স্থানীয়রা জানান, ১৯৯১ সালের মতো পুনরায় যদি এসব এলাকায় মোখা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয়, তাহলে আরো ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হতে পারে।

উপকূলীয় বনবিভাগের অগোচরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বন বিভাগের জায়গা দখল ও বন উজাড় চলতে থাকায় চরম হুমকীর মুখে পড়েছে উপকূলীয় বেঁড়িবাধ।

বাড়বকুন্ড, মুরাদপুর, বাঁশবাড়িয়া উপকূল এলাকা ঘুরে জানাযায়, বছরের পর বছর বনবিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলের বনাঞ্চল উজাড় হওয়ায় উপকূলে বসবাসরত মানুষদের জীবনে দিনে দিনে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে বলে আশংকা করছেন তারা।

সীতাকুন্ড উপকূলীয় বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা এম এম কামাল উদ্দীন প্রতিনিধি কে জানান, বিভিন্ন কারনে বর্তমানে সীতাকুন্ডের উপকুলীয় এলাকায় বনায়ন বন্ধ রয়েছে। কিছু মহল রাতের আধারে বনায়ন ধ্বংস করছে।তিনি মনে করেন উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর বনায়নের প্রয়োজন রয়েছে। বনায়ন হলেই বেড়িবাঁধ রক্ষা পাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102