ছবিঃ চ্যানেল ১১ নিউজ
জনবল, অবকাঠামোগত সংকটসহ নানান সমস্যায় জর্জরিত ময়মনসিংহ নান্দাইল উপজেলার রসুলপুর উওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে এই বিদ্যালয়টিকে শিশু শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিম্ন মাধ্যমিকের এই নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ায় জনবল সংকটের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিদ্যালয়ের অধিকাংশ পাঠদান কার্যক্রম চলছে পরিত্যক্ত টিনশেড ভবনে। এতে শুষ্ক মৌসুমে জোড়াতালি দিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালানো গেলেও বর্ষা মৌসুমে বিঘ্ন ঘটে। প্রাক-প্রাথমিকসহ ৯টি শ্রেণীর জন্য ১৭টি শ্রেণীকক্ষ দরকার। কিন্তু বর্তমানে ব্যবহার অনুপযোগী শ্রেণীকক্ষসহ ৭টি কক্ষে পালাক্রমে গাদাগাদি করে পাঠদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা নান্দাইল ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে ১৯৭৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ১/৭/১৯৭৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়। এ বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৫০ জন। বিদ্যালয়ের প্রাথমিক স্তরে কর্মরত শিক্ষক আছেন ১০ জন। ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত নেই কোন বিষয় ভিত্তিক আলাদা শিক্ষক। গণিত বিষয় পাঠদান করেন একজন মানবিক শাখার শিক্ষক। যিনি ইংরেজি বিষয়ে পাঠদান করেন তিনি ইংরেজি শিক্ষক নন।
শুধু তাই নয়, নিন্ম মাধ্যমিকের অতিরিক্ত এই তিন শ্রেণির জন্য নেই কোনো শ্রেণীকক্ষ, আসবাবপত্র ও পাঠদানের জন্য শিক্ষা উপকরণ। এসবের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দও নেই। এতে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন রসুলপুর উওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। প্রাথমিকের শিক্ষক দিয়েই চলছে নিন্ম মাধ্যমিকের পাঠদান কার্যক্রম। নিন্ম মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য এই বিদ্যালয়ে আরও অন্তত ৫ জন শিক্ষক দরকার।
অভিভাবকদের দাবি, শিক্ষাবান্ধব এই উদ্যোগটিকে সফল করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় শিক্ষকের ব্যবস্থা এবং অবকাঠামো সংকট দূর করতে হবে।
স্থানীয়রা জানায়, কয়েক বছর আগে তাঁরা এই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবিতে উপজেলা প্রশাসনের কাছে মানববন্ধন করে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। পরে দুইজন শিক্ষককে প্রেষণে এই বিদ্যালয়ে পাঠায়। কিন্তু তাঁরা বেশিদিন স্থায়ী হননি। এ অবস্থায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঠদান কার্যক্রম চালানোর জন্য দুইজন শিক্ষিত নারীকে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়। খন্ডকালীন শিক্ষক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সমন্বয়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছিল। চলতি বছর খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতনভাতা নিশ্চিত করতে না পারায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের মেয়াদ আর বাড়াননি।
শামছুল হাসান সাগর ও মিজানুর রহমান নামে দুইজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়টিতে শিক্ষকের অভাবে মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তাদের সন্তানদের অন্য কোথায় পড়ানো যায় তা নিয়ে চিন্তিত আছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এই বিদ্যালয় থেকে এত দিন কোনো শিক্ষক প্রশিক্ষণের সুযোগ পাননি।
বিদ্যালয়টিতে মানসম্মত শিক্ষার নিশ্চয়তা না পেয়ে অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ছুটাছুটি করছেন।
বিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম বলেছেন আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য কমপক্ষে আরও পাঁচ জন শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে।শিক্ষক ও অবকাঠামো সংকটের কারণে সঠিকভাবে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।আসবাবপত্র, ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর কম থাকায় পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়া গত দশ বছর ধরে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষা কার্যক্রম চললেও সরকারীভাবে অফিস ব্যবস্থাপনার জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফজিলাতুন্নেছা বলেছেন, রসুলপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সমন্বয় এর আগে করা হয়েছিলো। দুই শিফট হলে দশজন শিক্ষক চলে। তিনি আরো বলেন, এই বিদ্যালয়ের ভবন ও শিক্ষকের ব্যবস্থা করবেন। আপাতত শিক্ষক নেওয়ার জন্য নতুন কমিটি লাগবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান আমাদের অনেক তীব্র শিক্ষক সংকট আছে। এসব স্কুলে যে কোনো শিক্ষক কে ডিপজিশন দেওয়া যায় না। মাধমিকে পড়ানোর মতো শিক্ষিত বা ট্রেনিং প্রাপ্ত শিক্ষক দিতে হয়। তাদের ট্রেনিং ও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হবে যেহেতু উপরের ক্লাসে পড়ায় সুযোগ সুবিধা পেলে তারা উপরের ক্লাস গুলো করাতে পার তো। সরকার এই বিষয়ে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নিবে।
তিনি জানান, রসুলপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে কথা বলবো।